আমেরিকার এক গবেষণা সংস্থার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত রিপোর্টে বিশ্বের ২০টি দূষিত শহরের নাম ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে কলকাতা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের শহরগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহানগরী।
এই রিপোর্টের শীর্ষে রয়েছে ভারতের আরেক শহর দিল্লি। তারপরেই কলকাতার স্থান। ২০টি শহরের মধ্যে ভারতের আরেক বড় শহর মুম্বাইয়েরও নাম রয়েছে। যদিও তা ১৪ নম্বরে। রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালে কলকাতায় প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৮৪ মাইক্রোগ্রাম। শীর্ষে ছিল দিল্লি (পিএম২.৫-এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ১১০ মাইক্রোগ্রাম)।
যেখানে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে পিএম২.৫-এর বার্ষিক উপস্থিতির নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষেত্রে তা প্রতি ঘনমিটারে ন্যূনতম ৩৫ মাইক্রোগ্রাম। ফলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতার বাতাসে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি উভয় সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার থেকেই বেশি।
কলকাতায় দূষণের মাত্রা বাড়ার কারণ কি?
পরিবেশবিদদের মতে, শহরের মধ্যে রাস্তার অনুপাতে যানবাহনের সংখ্যা, যানজটের বহর, শিল্পক্ষেত্রে শিথিলতর দূষণবিধি—এই প্রতিটি বিষয়ই দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। নগরাঞ্চলের দূষণ প্রতিরোধে একটি সুনির্দিষ্ট ও সুসংহত নীতি প্রয়োজন। তাতে নতুন নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মবিধি যেমন থাকবে, তেমনই প্রয়োজন সঠিক গণপরিবহণ নীতিরও।
অন্যদিকে জোর দিতে হবে পরিবেশবান্ধব, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের উপর। সাইকেলের জন্য পৃথক করিডরের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অন্য দিকে, শহরে প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। কলকাতা শহর গত কয়েক বছরে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীতগামী হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা বায়ুদূষণ রোধ করতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে কিছু নিয়মবিধি জারি করেছিল। ১৩ দফা সেই নিয়মবিধির মধ্যে রয়েছে ধুলো আটকাতে নির্মাণস্থল ঢেকে রাখা, নির্মাণ সামগ্রী আচ্ছাদনে মোড়া, রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী না-রাখা, পুরনো বাড়ি ভাঙার সময়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার ধুলো নিয়ন্ত্রণে ‘ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার’-এর মাধ্যমে জল দেওয়া-সহ আরও অনেক কিছু। তবে আদৌ কতটা নেই নিয়মবিধি মেনে চলা হয়েছে বা হচ্ছে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদরা।