সামান্য থেকে অসামান্য। রাতারাতি ডিরেক্টর। কেউ রান্নাবান্নার কাজ করেন, আবার কেউ মালী, কেউবা পিয়ন, আবার কেউ তো গাড়ি চালাক। হঠাৎ একদিন হয়ে গেলেন ডিরেক্টর। কিভাবে এই ভাগ্যোন্নতি? তা ওই ব্যক্তিরা নিজেরাই জানেন না।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ইডি যখন তদন্ত অভিযান শুরু করে তখনই শোরগোল পড়ে যায় সারা রাজ্যে। ঠিক সেই সময় ওই নিম্নবর্গীয় মানুষজন সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জানতে পারেন, তাঁরা বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর। তাঁদের বয়ান তুলে ধরে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলার চার্জশিটে এমনই দাবি করেছে ইডি। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা সেই চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে বহু ব্যক্তির বয়ান তুলে ধরা হয়েছে।
চার্জশিটে কল্যাণ ধর নামে এক ব্যক্তির বয়ান তুলে ধরেছে ইডি। ইডি-র দাবি, বয়ানে কল্যাণ জানিয়েছেন, তাঁর শ্যালিকা অর্পিতা তাঁকে গাড়ির চালক হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু অর্পিতার সঙ্গে তাঁকেও যে ‘ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘সিম্বায়োসিস মার্চেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ডিরেক্টর বানানো হয়েছে, তা তিনি জানতেনই না। আবার অর্পিতার নির্দেশেই না-পড়েই নানা নথিতে সই করেছেন তিনি। চার্জশিটে ইডি-র দাবি, ‘অপা ইউটিলিটি সার্ভিস’ সম্পর্কেও তাঁর কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন কল্যাণ।
ইডি-র আদালতে পেশ করা চার্জশিটে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম রয়েছে। চার্জশিট অনুযায়ী সেই সব লোকের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বয়ান রেকর্ড করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর করা হয়েছে না-জানিয়ে।
এবিষয়ে এক ব্যক্তি জানান, তিনি ছিলেন পাচক, বাগান দেখাশোনার কাজও করতেন। কিন্তু তিনি যে একটি সংস্থার ডিরেক্টর, তা তাঁর অজানা ছিল। গত জুলাইয়ে ইডি-র তল্লাশি শুরুর পরে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, তদন্তকারীদের কাছে ওই ব্যক্তিও দাবি করেছেন, না-পড়েই বিভিন্ন নথিতে সই করতেন তিনি।
এই একই কথা জানিয়েছেন ওই সংস্থার আর এক ‘ডিরেক্টর’। চার্জশিটে ইডি-র দাবি, ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিভিন্ন নথির পাশাপাশি তাঁকে সাদা কাগজেও সই করতে বলা হত। তবে ওই সংস্থার অফিসে কোনও দিন যাননি তিনি। চার্জশিটে ইডি আরও জানিয়েছে, পিয়নের পদে কর্মরত এক ব্যক্তির দাবি, তাঁরও জানা ছিল না যে, সংস্থার ডিরেক্টর হয়ে বসে রয়েছেন তিনি!