মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বলতেন, খুব তাড়াতাড়ি দলবদলের জন্য গেরুয়া দফতরের সামনে তৃণমূল বিধায়কদের লাইন লেগে যাবে। এবার একই সুর শোনা গেল মিঠুন চক্রবর্তীর গলায়। তিনিএকেবারে সংখ্যা জানিয়ে বলছেন, কত জন তৃণমূল বিধায়ক বিজেপিতে আসার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।
ধীরে ধীরে রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে মিঠুনের। এই অভিনেতা এখন বিজেপির রাজ্য কোর কমিটির সদস্য। অন্যদিকে মুকুল বরাবরই পিছন থেকে নিজের কাজ করেছেন। প্রথমবার ভোটে হারার পর তিনি সংগঠনে মনোনিবেশ করেন। যার অন্যতম পথ ছিল, অন্য দল ভাঙিয়ে নিজের দলের পরিধি প্রশস্ত করা। বস্তুত, তৃণমূলে মুকুলই প্রথম দলছুটদের জন্য নিজের দলের দরজা হাট করে খুলে দিয়েছিলেন।
বিজেপি বা তৃণমূল— সমস্ত দলই মেগাস্টার মিঠুনকে দলে নিয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তার জন্যই। বিজেপির একাংশ মনে করছে, মিঠুন তাঁর জনপ্রিয়তার জোরেই দল ভাঙাতে সমর্থ হবেন। সেখানেই মুকুলের সঙ্গে তাঁর তুলনা। গত জুলাই মাসে আচমকাই তিনি হাজির হন। এখন তিনি দলে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন।
বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে সভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সভাতেই তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মিঠুন যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। ‘জাত গোখরো’ ডায়লগ দিয়ে দলবদলের পরে ভোটের প্রচারে টানা অংশ নিয়েছিলেন এই অভিনেতা। তার পর আর তাঁর দেখা মেলেনি।
পুজোর মুখে রাজ্যে নতুন দাবি নিয়ে মিঠুন সটান বুক ঠুকে বলেন, ‘‘৩৮ জন তৃণমূল বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তার মধ্যে আমার সঙ্গে ডিরেক্টলি (সরাসরি) ২১ জন।” এই সংখ্যা কিসের হিসাবে? বিজেপি নেতৃত্ব জানেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আবার বলছি, আবার বলছি, আবার বলছি। ব্যাক সাপোর্ট না থাকলে আমি কোনও কথা বলি না।’’
কিন্তু তাঁদের নাম কী? বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘তৃণমূলের সবাই চোর নন। যাঁরা ভাল তাঁদেরই একটা অংশ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।” তাঁর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল বিধায়ক এবং নেতাদের কোনও তালিকা কি নেতৃত্বকে দিয়েছেন? মিঠুনের জবাব, ‘‘এত স্পষ্ট করে বলব না। আমি প্রোটোকল মেনে কথা বলি। শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁদের নির্দেশ আমি এখানে এসে এই কথা বলছি।”
অভিনেতাকে রাজ্যে কাজে লাগানোর নির্দেশ যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে আগেই এসেছে, তা গেরুয়া শিবিরের অনেকেই বলেছিলেন। এবার কোর কমিটিতে জায়গা করে দেওয়ায় সেটা আরও স্পষ্ট। তবে মিঠুনকে দিয়ে তৃণমূল ভাঙানোর খেলাই কি খেলতে চাইছে বিজেপি? ঠিক যেমন চেয়েছিল মুকুলের মাধ্যমে? দলের মধ্যেই এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।