Advertisement
রাজনীতিরাজ্য

‘উৎকর্ষ বাংলা’ কর্মসূচিতে বিলি করা হল ভুয়ো নিয়োগপত্র, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন চাকরিপ্রার্থীরা

গত সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘উৎকর্ষ বাংলা’ কর্মসূচিতে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন।
নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে খুশি হয় চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু পরক্ষণেই জানতে পারে যে, সেটি আসলে প্রশিক্ষণের ‘অফার লেটার’। পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই জানতে পারলেন, ওই অফার লেটারটিও ভুয়ো।

এবিষয়ে নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, পড়ুয়াদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন হুগলি জেলার ১০৭ জন। তাঁদের অনেকেই ভুয়ো কাগজ পেয়ে হতাশ। কী ভাবে সরকারি স্তর থেকে এমন ভুয়ো কাগজ বিলি করা হতে পারে তা চিন্তা করে পারছে না চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকে আবার ওই চিঠি পান সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছে।

যে প্রশিক্ষণ সংস্থার (ফানফার্স্ট গ্লোবাল স্কিলার্স) সহযোগিতায় গুজরাতের সুরেন্দ্রনগরে সুজ়ুকি মোটর সংস্থায় দু’বছরের জন্য ওই চাকরিপ্রার্থীদের ‘ভেহিকল টেকনিশিয়ান’ হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেই সংস্থার সেন্টার ম্যানেজার বেদপ্রকাশ সিংহও দাবি করেছেন যে, ওই কাগজ ভুয়ো। চাকরিপ্রার্থীরা তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরেই সরব হন।

বৃহস্পতিবার সুরাত থেকে বেদপ্রকাশ জানান, তাঁরা গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে এ ধরনের প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত। কিন্ত এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁদের কোনও যোগাযোগই হয়নি।
ওই চাকরিপ্রার্থীদের কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এইচআইটি) থেকে ফোনে তাঁদের বলা হয়, ‘ওটাতে এই মুহূর্তে যোগ দেওয়ার দরকার নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ কথা বলছে। তারা জানানোর পরে যোগ দেওয়া যাবে’। এক প্রার্থী পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ওটা তো ফেক বলছে।’’ ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, “সে জন্যই ডিপার্টমেন্ট কথা বলছে। এই মুহূর্তে জয়েন করার দরকার নেই।”

এবিষয়ে জেলা আইটি বিভাগের নোডাল অফিসার তথা এইচআইটি কলেজের অধ্যক্ষ সৌমিত্র সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা বলার রাজ্য স্তর থেকে বলা হবে।’’ জেলা ‘উৎকর্ষ বাংলা’র নোডাল অফিসার রাখি বিশ্বাসও বলেন, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ মগরার বাগাটি রামগোপাল ঘোষ হাই স্কুলের ৯ ছাত্র স্কুল থেকে বুধবার দুপুরে ওই চিঠি পান। এক ছাত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘কারিগরি শিক্ষা দফতর আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’’

আরামবাগ মহকুমা থেকে মোট ২১ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে খানাকুলের গৌড়ান গ্রামের অতনু বাগীশ বলেন, ‘‘নিয়োগপত্রে রিপোর্ট করার সময়সূচি ছিল ১৪ তারিখ সকাল ১০টার মধ্যে। আমরা চিঠি পেলাম তার দু’ঘণ্টা পরে। বিষয়টি জানতে নিয়োগপত্রে থাকা সেন্টার ম্যানেজারের মোবাইলে সরাসরি ফোন করে জানতে পারি, নিয়োগপত্র তাঁদের নয়, ভুয়ো। তারপরে একে একে সবাই ফোন করে নিশ্চিত হই।’’

এপ্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বাংলার অশেষ দুর্গতি, লজ্জা ডেকে আনছেন এঁরা! সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ বন্ধ রেখে কিছু বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষণ বা অস্থায়ী কাজের চিঠি বিলি করে সরকার কৃতিত্ব দাবি করতে যাবে কেন? তার পরে আবার দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি সংস্থার নামে ওই চিঠিও জাল! এটা কি মুখ্যমন্ত্রীর জালিয়াতি নাকি আধিকারিকেরা জালিয়াতি করে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ডোবলেন?’’

চাকরি দেওয়ার নামে জালিয়াতির দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আপনি কি সত্যিই বোঝেন যে, আপনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? জামতাড়ার জালিয়াতি চক্রের মূল পাণ্ডার মতো কাজকর্ম করছেন! নেতাজি ইন্ডোরে ১০ হাজার কর্মসংস্থানের কাগজ দেওয়ার নামে যা করলেন, জাল বেরোল! মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকারের কিছু যদি আদৌ অবশিষ্ট থেকে থাকে, এই কেলেঙ্কারির পরে সেটাও হারিয়ে ফেলেছেন। অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’’

পক্ষান্তরে, আবার রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের এই সম্পর্কে কিছু জানা নেই। এই বিষয়ে সরকারি আধিকারিকেরাই বলতে পারবেন। তবে যে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সিপিএম বা বিজেপি প্রশ্ন তুলবে, সেটা আমরা জানি!’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.