Advertisement
রাজনীতি

স্নানের সময় গ্রাম থেকে জল তুলে গায়ে ঢেলে দেবে এমন লোক চাই, জেলের মধ্যে বায়না পার্থের

প্রেসিডেন্সি জেলের নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে তিন দিন দুপুরে বন্দিদের আমিষ পদ দেওয়া হয়। যেদিন মাছ হয় সেদিন প্রত্যেক বন্দি দু টুকরো করে পায়। কিন্তু জেলের সূত্র খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বায়না করেছেন মাছ হলে চার টুকরো এবং মাংস হলে ছয় টুকরো তাকে দিতে হবে। ওনার দাবি অন্য বন্দীদের থেকে তাকে সব সময় বেশি দিতে হবে।

খাবারের মতো স্নানের ক্ষেত্র পার্থের অনেক আবদার রয়েছে তাকে নিয়ে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে কারারক্ষীদের একাংশ।নিরাপত্তার কারণে ‘পহেলা বাইশ’ ওয়ার্ডে পার্থের দু’নম্বর সেলের সামনে বড় প্লাস্টিকের ড্রামে জল রাখা থাকে।  এতদিন তিনি নিজেই মগ দিয়ে ড্রাম থেকে জল তুলে স্নান সারতেন। কিন্তু এখন তার দাবি, স্নানের সময় তাকে লোক দিতে হবে যিনি মগ দিয়ে ড্রাম থেকে জল তোলে তার গায়ে ঢেলে দেবেন স্নানের সময়। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের, দাবি এটা অসম্ভব করা এরম কোন আইন বিধি কোথাও লেখা নেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায় শারীরিকভাবে সক্ষম ,তিনি অসুস্থ নন। কিন্তু পার্থর নাছোড়!

এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এ ভাবেই স্নান থেকে খাবার পর্যন্ত সব বিষয়ে নানা বায়নায় কারাকর্মীদের তটস্থ করে রাখছেন বলে জেল সূত্রের খবর। তার এই রূপ কার্যকলাপে সবাই অসন্তুষ্ট। কারণ অন্যায় আবদার খারিজ করে দেবার পরেও তিনি তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে নরতে অনর। খাবার স্নানের সঙ্গে ইদানিং যুক্ত হয়েছে ফোনের বায়না।

জেলের ফোন থেকে প্রত্যেক বন্দি যে-কোনও তিনটি নম্বরে দশ মিনিট কথা বলতে পারেন। পার্থ দু’টি নম্বর জেল-কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। একটি তাঁর আইনজীবীর, অন্যটি তাঁর এক আত্মীয়ের। কারারক্ষীদের অভিযোগ, তাঁর ফোনের সময় কোনও রক্ষীর ধারেকাছে থাকা চলবে না, তাঁর সেলের সামনে সর্বক্ষণ রক্ষী রাখা যাবে না বলে দাবি তুলেছেন পার্থ। ওই বিচারাধীন বন্দির ‘হুকুম’, তাঁর অনুমতি ছাড়া রক্ষীরা যেন সেলের সামনে না-আসেন। কারারক্ষীদের বক্তব্য, এর কোনওটাই সম্ভব নয়। আদালতের নির্দেশে পার্থের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে।

অন্যায় আবদার নয় পার্থর হুকুমকারী নিয়েও দাবি উঠেছে কারারক্ষীদের। তাদের বক্তব্য পার্থ তো এখনো নিজেকে মন্ত্রী ভিআইপি বলে দাবি করছেন। তার মতে নাকি তার সব সুযোগ সুবিধা পাওয়াই প্রাপ্য। কারা কারা

কারাকর্তারা জানাচ্ছেন,পার্থের কোন অন্যায় আবদার মানে হচ্ছে না বাকি বন্দীদের মতনই তার সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে।তবে পার্থ রোজই নিজের টাকা দিয়ে ক্যান্টিন থেকে খাবার আনিয়ে খাচ্ছেন। সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সেলের সামনে গিয়ে ক্যান্টিনের তরফে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে পার্থের আইনজীবী ও আত্মীয়েরা টাকা জমা দিচ্ছেন। তা দিয়ে পার্থ খাবারের দাম মেটাচ্ছেন। তবে চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর খাবারদাবারের দিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।

পার্থর উপরে শুধু কারারক্ষীরায় ক্ষেপে নেইনিয়োগ-দুর্নীতিতে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় পার্থের একদা ঘনিষ্ঠ পলাশিপাড়ার বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যও এখন তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যদিও একই বাটে সাত নম্বর সেলে থাকছেন তিনি। তাদের বক্তব্য জেলে ঢোকার প্রথম দিন মানিক পার্থদা বলে সম্বোধন করেছেন। যদিও সেই ডাকে সাড়া দেয় নি পার্থ।পরের দিন সকালেই জেলবন্দি শান্তিপ্রসাদ সিংহ, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় ও সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে জেল-চত্বরে অনেক ক্ষণ গল্পগুজব হয় মানিকের। তার পর থেকেই পার্থকে এড়িয়ে চলেছেন মানিক। শান্তিপ্রসাদেরা রয়েছেন পহেলা বাইশ ওয়ার্ডের পাশের ওয়ার্ড ‘তেইশ-চুয়াল্লিশে’। মাঝেমধ্যেই মানিকের সঙ্গে তাঁদের আড্ডা হয়। তাদের সকলকেই নাকিজেল সুপারের অফিস, ক্যান্টিন বা জেল হাসপাতালে যেতে হলে পার্থের সেলের সামনে দিয়েই যেতে হয়। মানিককে দেখে সেলের ভিতর থেকে পার্থ বেশ কয়েক বার ‘মানিক মানিক’ বলে ডাক দিয়েছেন। কিন্তু মানিক ঘুরেও তাকাননি বলে জানান কর্তব্যরত কারারক্ষীরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.