গত কয়েক বছরে বোলপুর তৃণমূল কার্যালয়ে অনুব্রত মণ্ডলের কালীপুজোয় গয়নার বহর অনেকাংশে বেড়েছে। এই বিপুল পরিমাণ গয়না এল কোথা থেকে এল, গরু পাচার মামলার সূত্রে সেই বিষয়টিও এখন তদন্তকারীদের নজরে। এক্ষেত্রে বীরভূম জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, সবই ‘ভালবাসার দান’। কেষ্টদার অনুরোধ রেখে দলের নেতাদের একাংশের থেকে শুরু করে অনেক ব্যবসায়ী গত বছর মা কালির জন্য গয়না দিয়েছেন।
প্রথমদিকে, কালী প্রতিমাকে আনুমানিক ৩০-৪০ ভরি সোনার গহনা দিয়ে সাজানো হত। কিন্তু, সময়ের সাথে সাথে গয়না বেড়েছে। ২০১৯ সালে ২৬০ ভরি গয়নায় কালীকে সাজিয়েছিলেন বীরভূমের বাহুবলী নেতা অনুব্রত। ২০২০ সালে অতিমারির সময়েও কালীমূর্তিকে ৩০০ ভরির কিছু বেশি স্বর্ণালঙ্কারে সাজানো হয়েছিল।
২০২১ সালে সেই গয়নার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭০ ভরি। টাকার অঙ্কে যা প্রায় তিন কোটি। মুকুট, সীতাহার-সহ নানা ধরনের হার, চেন, চূড়, রতনচূড়, আংটি, চুড়ি, বালা, বাউটি, বাজুবন্ধ প্রভৃতি মিলিয়ে ওই বিপুল সোনার গয়না নিজের হাতে কালীকে পরিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল।
এক জন জেলা সভাপতি হয়ে কেষ্ট এত সোনার গয়না কোথা থেকে পেলেন, তা সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে। তবে দলের নেতাদের একাংশের দাবি, গত কয়েক বছরে ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি থেকে শুরু করে আরও নেতা এবং বিধায়কেরাও কালীপুজোর সময় কিছু না কিছু গয়না দেবীকে প্রণামী হিসেবে দিয়েছেন।
জেলার একাধিক প্রোমোটার ও সোনার ব্যবসায়ীরাও গয়নাদাতার তালিকায় আছেন বলেও দাবি করা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, তেমন কিছু ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে তদন্তকারীরা। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়ুই থানা এলাকার এক নেতা গত বছর জেলা সভাপতির এক কথায় কালী প্রতিমার জন্য তিন লক্ষ টাকায় গলার হার বানিয়ে দিয়েছিলেন। জেলার এক শীর্ষ নেতাও কেষ্টর কথায় লক্ষাধিক টাকার গয়না গড়িয়ে দেন।
গোপন সূত্রে খবর, এত পরিমাণ গয়নার মাত্র অল্প অংশ পার্টি অফিসের একটি আলমারির লকারে রাখা থাকে। অধিকাংশ গয়নাই থাকে অনুব্রতের কিছু নিকটাত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠের ব্যাঙ্কের লকারে। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দেবীর গয়না সুরক্ষিত অবস্থাতেই রয়েছে। সময় হলে পরে আবার পরানো হবে।”
এবছর অনুব্রত জেলে থাকায় অলঙ্কারের বাহুল্য চোখে পড়েনি। ২৫ থেকে ৩০ ভরির মতো গয়না পরানো হয়েছে মা কালীকে। পাশাপাশি, দলের নেতাকর্মীরা এ বার আর নতুন করে আর গয়না দেননি। গচ্ছিত গয়না থেকেই প্রতিমাকে গয়না পরানো হয়েছে বলেই খবর।