Advertisement
অফবিট

দেবী দুর্গার মুখেই মেয়ের মুখ, আজও মহা সমারোহে পূজিত হন বুড়ি মা

পুজো প্রায় দোরগোড়ায়। প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। পাড়ার পুজোর সঙ্গে সঙ্গে সাজো সাজো রব পরে গিয়েছে পারিবারিক দুর্গাপুজোগুলির ক্ষেত্রেও। সেরকমই এক পুজোর গল্প শোনাতে চলেছি। দুর্গাপুরের গোপালপুরের চট্টোপাধ্যায়ের বুড়ি মার বয়স প্রায় ৬০০ বছরেরও বেশি । ১৬৫০ খৃষ্টাব্দের আগেও এই বুড়ি মায়ের প্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকেই দুর্গাপ্রতিমা এখানে বুড়ি মা হিসাবেই পূজিত।

কিন্তু কেন বুড়ি মা নাম ? শোনা যায়, বাঁকুড়ায় বাড়ি ছিল বৈদ্যনাথ রায়ের । বৈদ্যনাথ রায়ের বাড়িতে দেবী দুর্গার পুজো হতো খুবই ধুমধাম করে। কোনও এক বছরে বৈদ্যনাথ রায়ের প্রথম কন্যা বুড়ির মৃত্যু হয় অকালে। আর বুড়ি ছিল বাবার প্রাণভ্রমরা। শোকে ভেঙে পড়েন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন মেয়েই যখন চলে গেল তখন দেবীর আরাধনা করে আর কী হবে। পুজো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ঠিক তখনই এক রাতে বৈদ্যনাথ রায়কে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন এবং বলেন যে ‘‌আমার মুখের দিকে তাকাবি আর দেখবি তোর মেয়ে বুড়ির মুখ, আমি তোর ঘরে তোর মেয়ে হয়েই পুজো নেব।’‌

এরপরে বৈদ্যনাথের আর এক কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। বারো বছর বয়সে তিনি তার মেয়ের বিবাহ দেন তাজপুরের বাসিন্দা নন্দলাল চট্টোপাধ্যায়ের সাথে এবং দুর্গাপুরের গোপালপুরে তিনি নিয়ে আসেন তার জামাতাকে। ১৬৫০ খৃষ্টাব্দের আগে নন্দলাল চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেন বুড়ি মায়ের। আজ যেখানে ঝাঁ চকচকে সব বাড়ি, গ্রামের একেবারে মধ্যভাগে প্রতিষ্ঠিত চট্টোপাধ্যায়ের বুড়ি মা । আসলে সেসময় এখানেই ছিল শ্মশানঘাট আর তান্ত্রিকেরা সেখানে বাস করতেন। বুড়ি মা আজ বহু গ্রামের আরাধ্যা দেবী।

বুড়ি মায়ের পুজো নিয়ে সারা গ্রাম মেতে ওঠে। তবে পুরনো কালের দিন ছিল একেবারে আলাদা । তিনদিন ধরে দেবীর অন্নভোগ পেতেন সব গ্রামের বাসিন্দারা। আজও প্রচুর মানুষ বুড়ি মায়ের অন্নভোগ নিয়ে যান , কেউ অন্নভোগ নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যান না এটাই চট্টোপাধ্যায় বাড়ির রেওয়াজ।

পুজো হয় রীতি মেনে। সপ্তমীর দিন আগমনী গান গেয়ে নবপত্রিকা আনা হয় । সেদিন বাড়ির মেয়েরা সিঁদুর খেলেন মহা আনন্দে । তবে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দেবী দুর্গা বুড়ি মায়ের মহাসপ্তসতী হোম বিখ্যাত । সপ্তসতী হোম অনেক বাড়িতেই হয় কিন্তু মহাসপ্তসতী হোম হয় চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে । মহাষ্টমীর মহাসপ্তসতী হোমে ৫০টি গ্রামের বাসিন্দারা আসেন হোমের আঁচ মাথায় নিয়ে মনের প্রার্থনা পূরণ করতে । আগে ৩২ মণ ঘি পুড়তো এই হোমে । তবে এখনও এই প্রজন্মও ধরে রেখেছেন
অনেকটাই।

প্রায় একশো কেজি ঘি এখনো হোমে পোড়ে । এই পরিবারের সদস্য শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‌৫০ গ্রামের বাসিন্দারা আসেন এই হোমের আঁচ গ্রহণ করতে । তিনি বলেন কথিত আছে এই মহাসপ্তসতী হোমের আঁচ মাথায় নিলে পরিবারের অভাব রোগব্যাধী , শোক দূর হয় আর তাই দূর দুরান্ত থেকে আসেন সবাই বুড়ি মায়ের মহাসপ্তসতী হোমের আঁচ গ্রহণ করতে।’‌ আজও মহাধুমধাম করে চট্টোপাধ্যায় পরিবার বুড়ি মায়ের আরাধনা করেন , এই বুড়ি মা চারদিন শুধু চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বুড়ি মা হিসাবে থাকেন না , সবার কাছেই তিনি বুড়ি মা হয়ে যান আর কাতারে কাতারে মানুষ আসেন বুড়ি মার কাছে মনের প্রার্থনা জানাতে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.