এই মুহূর্তে ইডি হেফাজতে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করার পর থেকেই তার সমস্ত বেনামি সম্পত্তির হদিস পেতে মতিয়া কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শনিবার পার্থ ঘনিষ্ঠ মোনালিসা দাসের দাদা মানস দাসের নামে নদিয়ার রানাঘাটে একাধিক জমির হদিস পেয়েছে সিবিআই।
এই তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার একাধিক ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা। তখনই উঠে আসে মোনালিসা দাসের নাম। শনিবার রানাঘাট-২ ব্লকের ভূমিরাজস্ব দফতরে হানা দেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। সেখানে বিভিন্ন নথি ঘেঁটে রানাঘাট ২ ব্লকের পাঁচটি জায়গা— বৈদ্যপুর-১, বৈদ্যপুর-২, আনুলিয়া, পায়রাডাঙা ও শ্যামনগরে মোনালিসার দাদা মানস দাসের নামে বেশ কয়েকটি জমির খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই হানার খবরটি নিশ্চিত করেছেন ভূমিরাজস্ব আধিকারিক জয়তী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করেছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ সিবিআই সূত্রের দাবি, পায়রাডাঙায় বহু জমির মালিক দু’জন ব্যক্তি। সেই সব জমিতে পার্থের কোনও বিনিয়োগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গত মঙ্গলবার রানাঘাটে একটি সিনেমহল-এর পাশে রেজিস্ট্রি অফিসে হানা দেয় তাঁরা। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মোট ৮ টি দলিল বাজেয়াপ্ত করেন।
এর পর শনিবার আবার অভিযান চালায় সিবিআই আধিকারিকরা। ভূমিরাজস্ব দফতরের পাশাপাশি রানাঘাট এডিএসআর (ডিরেক্টরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউ) দফতরেও যান কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সেখান থেকে কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক-সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু জমির নথিতে মালিক হিসাবে এলাকায় ‘সমাজসেবী’ বলে পরিচিত মানসের নাম রয়েছে। জানা গিয়েছে, বৈদ্যপুরের বেগোপাড়ার জাতীয় সড়কের পাশে মানসের নামে একাধিক জমির হদিস মিলেছে।
বৈদ্যপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, মানস ও তাঁর সহকারী মনোজ ঘোষ নিজেদেরকে পার্থ ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে প্রচুর জমি জবরদখল করেছে। স্থানীয়দের দাবি, কয়েক বার অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করা হলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। স্থানীয় এক ছোট ব্যবসায়ী সুখদেব বলেন, ‘‘থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলাম। উল্টে আমার বিরুদ্ধেই ভুয়ো মামলা দেওয়া হয়! প্রভাব খাটিয়ে মানস দাস ও মনোজ ঘোষ অনৈতিক কাজ করেছেন।’’ এবিষয়ে রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি। এলে তদন্ত করে দেখা হবে।’’
তদন্তকারীদের অনুমান, ২০১৬-২১ সালের মধ্যে পার্থর টাকায় রানাঘাট-১ এবং রানাঘাট-২ ব্লকে বহু সম্পত্তি কিনেছেন মানস-মনোজ। সমাজসেবার আড়ালে কী ভাবে এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন মানস ও মনোজ তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা। প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কেমন ছিল, কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, এই নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে তাঁরা। মানস তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। কোথা থেকে কী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, জানি না। বলতে পারব না।’’