Advertisement
কলকাতা

কলকাতা পুলিশের ফাঁদে প্রতারনা চক্র, ধৃত সাত

ঘটনার সূত্রপাত হয় ২৩ মে। একটি নামী বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার কর্মী পরিচয় দিয়ে একাধিক ব্যক্তির ফোন আসতে থাকে ৫২ বছর বয়সী শেখ নূর আলমের কাছে, সকলেরই বক্তব্য এক – তাঁর বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার বসাতে সাহায্য করবে তারা, বদলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে ২০.৫০ লক্ষ টাকার কিছু বেশি অর্থ। বলা বাহুল্য, না মোবাইল টাওয়ার বসানো হয়, না তাঁর টাকা ফেরত পান নূর আলম।

তদন্তে নেমে পোর্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার প্রযুক্তি সহায়তার ফলে আমরা জানতে পারি, এই চক্রের অবস্থান সল্টলেকের সেক্টর ৫ অঞ্চলে। আরও অনুসন্ধান করতে সূত্র মারফত খবর যোগাড় করতে শুরু করি আমরা, এবং সেই খবরের ভিত্তিতেই নিউ টাউন থানার অন্তর্গত কৃষ্ণপুর এলাকায় একটি ভাড়াবাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় মানসজ্যোতি গগৈ (২২) ও সাদ্দাম হোসেন (২৫)।

জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন ওই দুজন আমাদের জানায়, সেক্টর ৫-এ ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার এলাকায় একটি বহুতলের ন’তলায় তাদের অফিস। সেই অফিসে গতকাল হানা দিয়ে আমরা আবিষ্কার করি, পিএম ওয়ানি ওয়াইফাই সার্ভিস নাম দিয়ে চলছে ভুয়ো কল সেন্টার, যেখান থেকে মোবাইল টাওয়ার বসানোর প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করা হয়। অফিসের মালিক অভয় তিওয়ারি (৩৮) এই ধরনের কল সেন্টার চালানোর কোনও বৈধ অনুমতিপত্র আমাদের দেখাতে পারেনি, ফলে গ্রেফতার করা হয় তাকেও।

অফিসে যেখানে বসে এ কাজ কোর্ট, সেই ‘ওয়ার্ক স্টেশনে’ এরপর আমাদের নিয়ে যায় গগৈ, যেখানে অন্য এক টেবিলে বসা অর্ঘ্য বৈষ্ণব (৩৩)-এর কাছ থেকে পাওয়া যায় একটি ফোন, এবং গ্রেফতার করা হয় তাকে। ফোনের মধ্যে যে সিম কার্ডটি ছিল, সেটি থেকেই নূর আলমকে ফোন করা হয়। এছাড়াও গগৈ-এর টেবিল থেকে পাওয়া যায় সম্ভাব্য ‘শিকারের’ তালিকাবিশিষ্ট একটি নোটবই, যাতে রয়েছে নূর আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বরও। এরপর গ্রেফতার করা হয় ওই ভুয়ো কল সেন্টারের আরও তিন কর্মীকে – মহঃ জফরুদ্দিন (৩১), বিশ্বজিৎ বরা (২৯), এবং রনি পাল (২৮)।

অফিসটি থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে মোট ১০৪টি ডায়ালার সেট, ৭৫টি ছোট বোতাম মোবাইল, ১০টি স্মার্টফোন, ৩৩টি সিম কার্ড, ১২টি এটিএম কার্ড, দুটি ল্যাপটপ, এবং নগদ ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ‘সিল’ করে দেওয়া হয় অফিস। ধৃতরা সকলেই আপাতত পুলিশের হেফাজতে।

ছবি রইল উদ্ধার হওয়া সামগ্রী, ৭ অভিযুক্ত এবং পোর্ট ডিভিশনের বিশেষ তদন্তকারী অফিসারদের, ইকবালপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর সিরিং তামাং এবং পোর্ট ডিভিশনের সাইবার শাখার সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান ও সার্জেন্ট মানজিৎ গোয়েল। গোটা তদন্তের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি কমিশনার, পোর্ট ডিভিশন জাফর আজমল কিদওয়াই, আই পি এস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.