Advertisement
রাজনীতিরাজ্য

মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে কী সতর্কবার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?‌

রদবদলের পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজ্যের সকল মন্ত্রীকে সতর্ক বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যে একাধিক মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর মন্ত্রিসভার এই প্রথম বৈঠক। এদিন রাজ্যের সকল মন্ত্রীদের বিশেষ কয়েকটি নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যেগুলি সকলে মানতেই হবে। তাঁর মতে, বিজেপির ফাঁদে একেবারেই পা দেওয়া চলবে না।

বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেন তা হল, এখন থেকে মন্ত্রীদের আয়কর রিটার্নের সকল নথি সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। আয়কর জমার পরে রিটার্নের যে ‘স্লিপ’ করদাতা পান, তার কপি মুখ্যসচিবের দফতরে জমা দিতে হবে। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীদের কাজও আলাদা করে নির্ধারণ করে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

তাছাড়া এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সকল মন্ত্রীদের সতর্ক করে বলেন, এদিন রাজ্যের বেশ কয়েক মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনো ফাইল খুঁটিয়ে না-পড়ে কেউ কোথাও সই করবেন না। কোনও সাধারণ সাদা কাগজে লেখা কিছুতে সই করা চলবে না। খেয়াল রাখতে হবে, সইয়ের উপরে ও নীচে যেন এমন জায়গা না-থাকে যেখানে অন্য কিছু লেখা যেতে পারে।

একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কলকাতার মধ্যে কোনও মন্ত্রী পুলিশ-পাইলট নিতে পারবেন না। জেলার মন্ত্রীদের হাইওয়ে দিয়ে আসার পরে কলকাতায় ঢোকার আগে পাইলট ছেড়ে দিতে হবে। একই ভাবে যাঁরা কলকাতার মন্ত্রী, তাঁরাও কলকাতার সীমানা পেরোনোর আগে পাইলট নিতে পারবেন না।

এরপরই বিজেপিকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপি ফাঁদ পেতে রেখেছে। ‘স্টিং অপারেশন’ করাতে চাইছে। ৫০০ লোককে নানা ভাবে কাজে লাগাবে। তাই সাবধানে কাজ করবেন। সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।’’

তাছাড়া এদিন একাধিক মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তোমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। এত অভিযোগ কেন?’’ দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে তাঁর দফতর ‘ভালো ভাবে’ দেখার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সুজিত তখন তাঁকে বলেন, ‘‘দমকলে সবই এখন অনলাইনে হয়।” মমতা পাল্টা বলেন, ‘‘শুধু অনলাইন নয়, অফলাইনে কী হয়, তা-ও আমার জানা আছে।’’

সেচ দফতরের পার্থ ভৌমিককে সতর্ক করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তোমার দফতর খুব ‘সেনসিটিভ’। অনেক কিছু হয়। সব দিক খেয়াল রেখো।’’ পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, ‘‘তোমার দফতর কিন্তু ঘুঘুর বাসা। নজর রাখবে।’’ নতুন পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে দফতরে এত দিনের ভারপ্রাপ্ত ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে কথা বলে নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘পযর্টনে ইন্দ্রনীলরা কিছু পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছিল। সেগুলি রূপায়ণের ব্যাপারে ওঁর সঙ্গে কথা বলে বুঝে নিয়ো।’’

এদিন মন্ত্রিসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের চুরি-দুর্নীতি দেখে রাজ্যের মানুষ ফাঁদ পেতেছিল। সেই ফাঁদে তৃণমূলের নেতামন্ত্রীরা ধরা পড়ে গেছে। এ সব কথায় আর কাজ হবে না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পাইলট থাকলেই অস্বচ্ছ আর না-থাকলে স্বচ্ছ, এ কেমন যুক্তি! সামনে পাঁচটা গাড়ি, পিছনে পাঁচটা। নেতা, মন্ত্রী সব এক। ক’দিন পরে পাইলট ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।। কারণ মন্ত্রীরা তো জেলে থাকবেন।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.