দেশের ৭৫ বছরের স্বাধীনতা উদযাপনের পরও আজও মহিলাদের পোশাককেই তাঁদের যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির কারণ হিসাবে দেখা হয়। মহিলারাই পুরুষদের উত্তেজিত করে, এমনটাই চিন্তাভাবনা দেশের বর্তমান সমাজের। সেরকমই এক মামলা দেখা গেল কেরলে। এক ৭৪ বছরের লেখক ও সমাজকর্মী সিভিক চন্দ্রনকে যৌন হেনস্থা মামলায় অন্তর্বতীকালীন জামিন দেওয়ার সময় কেরল আদালত তার নির্দেশে জানিয়েছে যে অভিযোগকারী যৌন উত্তেজক পোশাক পরায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৪এ ধারা বলবৎ হবে না। আর তাই আদালত অভিযুক্তের অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে দেয়।
কোকিঝোড়ের দায়রা আদালতের মতে, ৭৪ বছরের বৃদ্ধ, যিনি শারীরিকভাবে অক্ষম, কখনই এক তরুণীকে জোর করে কোলে বসাতে পারেন না। সিভিক চন্দ্রনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর স্তনে হাত দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, আদালতে অভিযুক্ত তাঁর জামিনের আবেদনের সঙ্গে ওই মহিলার একটি ছবিও পেশ করেন। আদালত জানিয়েছে, সেই ছবিতে মহিলাকে উত্তেজক পোশাক পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ফলে সেক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারার এ অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও মামলা বলবৎ হচ্ছে না।
আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবীরা জানিয়েছেন যে অভিযোগকারিনী তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে গিয়েছিলেন। যে সময় ঘটনা ঘটেছে সেখানে একাধিকজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা কেউই আওয়াজ তোলেননি ঘটনার বিরুদ্ধে। ফলে কীভাবে এই মামলার যুক্তি খাড়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আদালতে। এছাড়া ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটা যৌন হেনস্থার ঘটনার অভিযোগ কেন দু’বছর পর দায়ের হয়েছে তার ব্যাখা সরকারি আইনজীবীকে দিতে বলা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, ৩৫৪এ ধারাটি খুব স্পষ্ট, যেখানে একজন মহিলার শালীনতা নষ্টের জন্য অভিযুক্তের একটি অভিপ্রায় থাকতে হবে। ৩৫৪এ ধারাটি যৌন হেনস্থার ধারা এবং শাস্তিযোগ্য। এই ৩৫৪এ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও মহিলাকে হেনস্থা করা হলে বা করার চেষ্টা হলে তা জামিনযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধীর দু’বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা দু’টিই একসঙ্গে হতে পারে। তবে তার জন্য শারীরিক যোগাযোগ অথবা যৌন মন্তব্য বা দাবী বা অনুরোধ থাকতে হবে। কিন্তু এই মামলায় সেই ধরনের অভিপ্রায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।