বরাবরই তিনি চর্চায় অভিনয়ের জন্য। যদিও টিভি সঞ্চালক হয়েই শুরুটা হয়েছিল। ছোট থেকেই অভিনয় এর প্রতি ছিল তার অনুরোধ।এগিয়ে চলার পথে কাঞ্চন মল্লিকের জীবনে প্রতিটা মোড়েই রয়েছে মোচড়। তিনি সংসারে অনেক অভাব অনটন দেখেছেন। সেসব কাটিয়ে তিনি ছিনিয়ে নিয়েছেন জয়।সঞ্চালক-অভিনেতা থেকে এখন তিনি বিধায়ক।রোড শো সঞ্চালক থেকে অভিনেতা কাঞ্চনের যাত্রাপথ খুব যে মসৃণ ছিল তেমনটা নয়।
১৯৭০ সালে তার জন্ম কালীঘাট এলাকায়।মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ছিলেন কাঞ্চন। কারখানার কর্মী ছিলেন তার বাবা।বাবা ছিলেন কারখানার কর্মী। সামান্য রোজগারেই চলছিল সংসার। কিন্তু, কাজল যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তে তখন তার বাবার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সংসারে টানাটানি যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছিল।অভিনেতা যখন মাধ্যমিক দেবেন আচমকাই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল জীবন। এক ধাক্কায় বয়সটা যেন পাঁচ বছর বেড়ে গেল। বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন, হারালেন কর্মক্ষমতা। বারোশো টাকা ছিল তখন মাসেই সংসারের জন্য। বড় ছেলে হওয়ার দরুন তাকে অনেক কিছুই করতে হয়েছে সংসারের জন্য।কষ্টের সংসার, তাই সেলসম্যান, পার্লারের ম্যানেজার— কী না করেছেন একটা সময়ে! কিন্তু অনেকেই জানেন না যে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় মদের দোকানের বাইরে সেলসম্যানের কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। কাঞ্চনের কথায়, ‘‘তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি, আচমকা বয়সটা যেন পাঁচ বছর বেড়ে গেল। কারণ বাবার সেরিব্রাল। মাসে ১২০০ টাকা প্রয়োজন সংসারে চালাতে, বাড়িতে সদস্য তখন সাড়ে পাঁচ জন। তাই সে দিনের সেই ছোট্ট ছেলেটাকে বেচুবাবুর চাকরি নিতে হল। তা-ও আবার মদের দোকানের বাইরে কোলা বিক্রির চাকরি। সেই দেখে এক জন সেই সময় বলেছিলেন ‘এত ছোট বয়সে মদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কোলা বিক্রি করছ, লজ্জা লাগে না?’ তখনই ওই লোককে জবাব দিই, সংসার চালাতে মাসে ১২০০ টাকার প্রয়োজন ১০০০ টাকা পেলেও চালিয়ে নেব, তিনি দিয়ে দিলে কাজটা ছেড়ে দেব।’’
একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি নিজের জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছে তিনি। অভিনেতা জানান মদের দোকানের বাইরে ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। সেই সময় তাকে নানা ধরনের সমালোচনা তির্যক মন্তব্যের মুখোমুখি ও পড়তে হয়েছে। আবার অভিনয় জীবনেও তাকে জায়গা করতে করতে হয়েছে বহুত সংগ্রাম।দীর্ঘ সময় পর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেয়েছেন। কলকাতায় ‘চেতনা’, ‘স্বপ্নসন্ধানী’র মতো একাধিক দলে নাটক করেছেন। প্রথম মঞ্চাভিনয় নব্বইয়ের দশকে ‘অচলায়তন’ নাটকে। টলিউডে তাঁর অভিষেক হয় ‘সাথী’ ছবির হাত ধরে। দেখতে দেখতে প্রায় ১৫০ ছবি করে ফেলেছেন। একাধিক টিভি সিরিয়ালেও কাজ করেছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বির্তকও হয়েছে তাঁর দাম্পত্যজীবন নিয়ে। তবে সে সবের বাইরে গিয়ে কাঞ্চনের অভিনয় ও তাঁর হাস্যরস বার বার জয় করেছে দর্শকের মন।