Advertisement
বিনোদন

বড় পর্দায় ফেলুদা, কেমন হল সন্দীপ রায়ের ‘হত্যাপুরী’?

কোন বিষয়ে নিয়ে সময় মেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাটা স্বাভাবিক। সিনেমার ক্ষেত্রে কখনও দর্শক তা গ্রহণ করেন আবার কখনও তা বর্জন করেন। সাম্প্রতিক অতীতে ফেলুদাও তার ব্যতিক্রম নয়। ফেলুদা পর ও পর্দা থেকে পা রেখেছেন ওটিটিতে। ফেলুদার চিরকালীন আবেদনে কোনও ভাটা পড়েনি মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযুক্ত হলেও। আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিযোগিতার মধ্যেই হঠাৎ করে চেনা গল্প যদি পুরনো ধাঁচে ধরা দেয়, তখন তা পর্দায় হাজির করে একরাশ টাটকা বাতাস এবং খুলে দেয় স্মৃতির ঝাঁপি। সন্দীপ রায় পরিচালিত ফেলুদার সাম্প্রতিক অভিযান ‘হত্যাপুরী’ দেখতে বসে বার বার এমনই মনে হচ্ছিল।

পুরীতে দ্বাদশ শতকের ‘অষ্টাদশসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা’ পুঁথিকে ঘিরে ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ুর রহস্যে জড়িয়ে পড়া— আশা করা যায়, বহুল চর্চিত উপন্যাসটির গল্প এর বেশি খোলসা করার প্রয়োজন নেই। বরং এই ছবিতে পরিচালকের সামনে উপস্থিত কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোকে একটু স্মরণ করা প্রয়োজন।তর্কসাপেক্ষে বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা এবং তার দুই বিশ্বস্ত সঙ্গীর চরিত্রায়নের জন্য সন্দীপবাবুকে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এমনকি জটায়ুর চরিত্রাভিনেতা না পাওয়ার জন্য এর আগে বেশ কয়েক বার জটায়ুহীন গল্পেই ফেলুদাকে দর্শকের সামনে হাজির করতে হয়েছে তাঁকে। তাই ‘হত্যাপুরী’ এই ৩ চরিত্রাভিনেতার কাছেও কোনও পাহাড়চূড়া জয় করার চাইতে কম কিছু ছিল না।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ফেলুদার চরিত্রে। সমালোচনার বন্যা শুরুতেই! কিন্তু অতীতের ফেলুদা চরিত্রের অভিনেতাদের তুলনায় বলা যেতে পারে তিনি স্বকীয়। ফেলুদার হাঁটাচলা, চাহনি, সর্বোপরি ‘মগজাস্ত্র’র ব্যবহারে তাঁর অভিনয় তীক্ষ্ণ। তবে ছবি জুড়ে সেই ধারাবাহিকতা নেই। বিশেষ করে জটায়ুর সঙ্গে তাঁর সঙ্গে ওজনগত পার্থক্য চোখে পড়ে। তবে তাঁর চেষ্টায় কোনও ত্রুটি নেই। ত্রয়ীর মধ্যে সব থেকে কমজোর মনে হয় তোপসের চরিত্রে আয়ুষ দাসের অভিনয়। আশা করা যায়, আগামী ছবিতে তিনি ভুল-ত্রুটি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

সত্যজিৎ সৃষ্ট চরিত্রগুলিতে ভালো লাগে পরান বন্দ্যোপাধ্যায় (দুর্গাগতি সেন), শুভাশিস মুখোপাধ্যায় (লক্ষ্মণ ভট্টাচার্য) এবং সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের (বিলাস মজুমদার) অভিনয়। ভরত কল ও সুপ্রিয় দত্ত যথাযথ। মূল গল্পের সময়কাল ছবিতে সমকালীন। সেই আন্দাজে চিত্রনাট্যে আরও কিছু স্তর যুক্ত হলে ভাল হত। সম্পাদনায় আরও একটু জোর দেওয়া উচিত ছিল। লোকেশন হিসাবে পুরীকেও সুন্দর ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ছবির অ্যাকশন বা ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যগুলোয় উত্তজনার পারদ একটু নিম্নগামী।

ফেলুদা ভালো নাকি খারাপ, সেই আলোচনা কি খুবই গুরু গম্ভীর ভাবে দেখার প্রয়োজন আছে? কারণ আমাদের কাছে ফেলুদা মানেই ফেলে আসা ছোটবেলা।অপ্রতিরোধ্য আবেগ। মাঝে কেটেছে ছ’টা বছর। তাই তর্ক সরিয়ে, বছর শেষে শীতের শহরে ছুটির আবহে বড় পর্দায় ফেলুদা ফিরেছে— এটাই যথেষ্ট নয় কি?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.