মিতুল আর মিষ্টি। বহরমপুর মাতিয়ে রাখত এই দুই খুদে। হাতে হাত দু’জনের। আপাত ভাবে হাত দু’টি একসঙ্গে না থাকলেও ছাড়াছাড়ি হয়নি কোনও দিনও। ঐন্দ্রিলা শর্মা চলে যাওয়ার পর সে কথাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর চিকিৎসক দিদি ঐশ্বর্য শর্মা।
২৪ বছরের স্মৃতি আঁকড়ে বসে রয়েছেন দিদি। আরও হয়তো কত কত বছর একসঙ্গে কাটানো ছিল। আরও কত লড়াই লড়তে হত। কিন্তু আচমকাই মাঝপথে সব থেমে গেল ছোট বোন। মিষ্টি ফেলে গেল মিতুলকে। কিন্তু দিদির ফেসবুকের দেওয়াল জুড়ে কেবলই বোনের ছবি, ভিডিও। কত কত সুখস্মৃতির কথা ফুটে উঠছে রোজ রোজ।
বোনের মৃত্যুর পর ফেসবুকে সদ্য একটি লেখা লিখেছেন ঐন্দ্রিলার দিদি। সেই লেখায় কাতর ডাক শুনতে পাওয়া গেল। বোনকে ডেকে চলেছেন ঐশ্বর্য। তিনি লিখলেন, ‘অনেকদিন তো হল, এবার তাড়াতাড়ি চলে আয় বুনু। তুই ছাড়া আমি যে পঙ্গু। কে আমাকে সাজিয়ে দেবে বল তো? কে আমার ছবি তুলে দেবে? কে না বলা মনের কথাগুলো আমার মুখ দেখে বুঝে যাবে? কে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো আমার সমস্ত মনের ইচ্ছে পূরণ করবে? কার সঙ্গে আমি ঘুরতে যাব? কার সঙ্গে পার্টি করবো? কার সঙ্গে আমি সারারাত জেগে সিনেমা দেখবো গল্প করব? কে আমাকে সঠিক পরামর্শ দেবে? আমাদের এখনও কত প্ল্যান্স বাকি আছে বল তো? কে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসবে? কে আমার জন্য পুরো পৃথিবীর সঙ্গে লড়বে, আমাকে আগলে রাখবে? আমার যে তুই ছাড়া আর কোনও বেস্ট ফ্রেন্ড নেই। তুই যে আমার জীবনীশক্তি। এই ২৪ বছরে আমি যে নিজে থেকে কিছুই করতে শিখিনি বুনু। আমি জানি তুই স্বাবলম্বী, কিন্তু তোর দিদিভাই যে তোকে ছাড়া খুব অসহায়। তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আয় বুনু। অপেক্ষায় রইলাম।’
ব্রেন স্ট্রোকের পর যে ক’দিন ঐন্দ্রিলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, ঐশ্বর্য প্রতি মুহূর্তে বোনের স্বাস্থ্যের আপডেট, চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দাঁতে দাঁত চেপে বোনের সঙ্গেই লড়াই করেছিলেন। কিন্তু বোনে আটকে রাখতে পারলেন না আর। বোনের শেষযাত্রায় নিজে হাতে সাজিয়ে বোনকে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন ঐশ্বর্য। আজ না থেকেও যেন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভীষণভাবে আছেন ছোট বোন ঐন্দ্রিলা। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় লেখা প্রতিটি শব্দেও যেন ফুটে উঠেছে সেই আবেগ।