গোটা বিশ্বের আর্জেন্তিনা (Argentina) ফ্যানেরা ৮৬ সালে মারাদোনার (Maradona) হাতে বিশ্বকাপ দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। শুরু হয়েছিল তারপর থেকে অপেক্ষার প্রহর গোনা। এরপর শুরু হয় বাঁ পায়ের জাদুকর মেসিকে নিয়ে স্বপ্ন বোনা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেই মুহূর্তের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল মেসি ব্রিগেড। কিন্তু, ফাইনালে জার্মানির (Argentina vs Germany 2014 Final Match) কাছে লজ্জার হার শেষ পর্যন্ত সমস্ত আর্জেন্তিনা ভক্তদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল। মিলন চৌধুরীও মেসিদের হার মেনে নিতে পারেননি। সেই রাতেই আত্মঘাতী হয়েছিলেন হাওড়ার এই মেসি ভক্ত। আর তিনি নেই সেই প্রভাতে। মিলনে মনে পড়ছে তাঁর বন্ধুদের। মেসির কাপ জয়ের পর ফেসবুক জুড়ে তাই মিলনের উদ্দেশ্যে আবেগঘন বার্তা।

আত্মঘাতী বাঙালি ফ্যান আর্জেন্তিনার পরাজয়ে!
সালটা ২০১৪। ব্রাজিলে বসেছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। দুরন্ত ফর্মে ছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র মেসি (Messi)। স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন মনে মনে সকল আর্জেন্তাইন ভক্তরাই। আবার কাপ উঠবে ১৯৮৬-র পর আর্জেন্তিনার ঘরেই। হাওড়ার মাকড়দার বাসিন্দা মিলন চিরকালই আর্জেন্তিনার ডাই হার্ট ফ্যান। ১৩ জুলাই মধ্যরাতের এই হাইভোল্টেজ খেলায় জার্মানির কাছে হেরে যায় আর্জেন্তিনা। প্রিয় দলের পরাজয় মেনে নিতে পারেননি মিলন। এরপরই চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। পরদিন সকালে ঘর থেকে উদ্ধার হয় এই আর্জেন্তিনা ভক্তের ঝুলন্ত দেহ।

বেটিংয়ে লক্ষাধিক টাকা হেরে আত্মঘাতী মিলন?

একাধিক তথ্য উঠে আসে মিলন চৌধুরীর আত্মঘাতী হওয়ার।একাংশের দাবি, তিনি জার্মানি বনাম আর্জেন্তিনা ম্যাচে বেটিং করেছিলেন। জার্মানি জিতলে তাঁকে চার লাখ টাকা দিতে হত। তাই এই পরাজয়ের পর আতঙ্কে, লজ্জায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন মিলন। এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রিয় বন্ধু শ্বেতা ঘোষাল ভট্টাচার্য বলেন, “আমার সঙ্গে ম্যাচের আগেই ওঁর শেষবার কথা হয়েছিল। সেদিন আমি বলেছিলাম জার্মানি জিতে যাবে। আমার কথা শুনে ও মনে মনে আঘাত পেয়েছিল। বলেছিল আর্জেন্তিনা আর মেসির জন্য প্রার্থনা করতে। বরাবরই আর্জেন্তিনার পাগল ফ্যান ও। চাইত মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে। তাই আজ যখন মেসি সত্যিই বিশ্বজয় করল তখন মিলনের কথা খুব মনে পড়ছে। ও থাকলে সত্যিই খুব খুশি হত।” একইসঙ্গে শ্বেতার বক্তব্য, “জয়পুরে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কাজ করত মিলন। ওঁর উপর পরিবারের অনেক দায়িত্ব ছিল। কয়েক মাসের মধ্যেই ওঁর বিয়ের কথা পাকা হয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে এমন ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। একটু আধটু বাজি লাগানোর অভ্যাস ছিল মিলনের তবে এত টাকার জুয়া খেলার মতো ছেলে ও ছিল না।”

ফেসবুকেও ভেসে উঠেছে এই বার্তা। বিশ্বকাপে মেসির চুম্বন, কাপ হাতে আর্জেন্তিনা দলের উচ্ছ্বাস বারবার মনে করাচ্ছে মিলনের মতো পাগল ফ্যানকে। বন্ধুরা ফেসবুক জুড়ে তাঁর উদ্দেশ্যে আবেগঘন বার্তা দিচ্ছেন।